জেনারেল স্টুডেন্টদের জন্য বাংলা ভার্শনে পড়াটা একটা লস প্রজেক্ট
বৃটিশ
শাসনামল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত আমাদের পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের অফিশিয়াল
ও এডুকেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ছিলো ইংরেজি। যার কারণে আমরা দেখবো যে আমাদের পূর্ববর্তী যারা
বৃটিশ বা পাকিস্তান আমলে পড়াশোনা করেছিলেন, তারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ইংরেজি বলতে
পারেন। সে সময়ের একজন ক্লাস ফাইভ পাশ ব্যাক্তিও আমাদের চেয়ে ভালো ইংরেজি বলতে পারবেন
এটাই স্বাভাবিক। কারণ সে সময়ে মানুষের মুখের ভাষা বাংলা থাকলেও অফিশিয়াল ও এডুকেশনাল
ভাষা ছিলো ইংরেজি। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন
রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হলেও অফিসিয়াল ও শিক্ষার ভাষা ইংরেজিই থেকে যায়। যার ফলে আমরা একটা
কোয়ালিটিফুল শিক্ষিত জেনারেশন পেয়েছিলাম। মুজিব বা জিয়ার শাসনামলে তারা আর যাই হোক
অফিসিয়াল ও এডুকেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ পরিবর্তনের মতো বোকামি করেন নি। তবে এই বোকামিটা
করেছে জিয়া পরবর্তী স্বৈরশাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। তার সময়েই অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ
ও এডুকেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা করে আমাদেরকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেয় সে। মূলত পাবলিক সেন্টিমেন্ট
কে নিজের দিকে টানতে গিয়ে যে কয়টা কুকর্ম এরশাদ করেছিলো তার মধ্যে তার এই উদ্যোগটি
অন্যতম। এর জন্য আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান ভুক্তভোগী তরুণ প্রজন্ম তাকে কোনোদিন ক্ষমা
করবে না।
বর্তমান
একবিংশ শতাব্দি হলো গ্লোবালাইজেশনের যুগ। এই যুগ সম্ভাবনার যুগ। এই যুগে বিশ্বের সাথে
তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে হলে বাংলার তরুণ প্রজন্মের দুটো জিনিশ জানতেই হবে; ১। আপগ্রেডেড
প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ২। খুবই ভালো ইংরেজি। এই দুটোর কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু
বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? স্কুল ও কলেজ লেভেলে কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ
বাদে আর কোথাও মান সম্মত ইংরেজি শিক্ষা পাচ্ছে না আমাদের তরুণেরা। যার ফলে ক্লাস ১-১২
পর্যন্ত ১২ বছর পড়াশোনা করেও আমাদের তরুণেরা শুদ্ধ ভাবে ইংরেজি বলতে, লিখতে বা পড়তে
পারে না। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এই বৈষম্য বিদ্যমান। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি
শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সেখানে শুধু ইংরেজি বিভাগ বাদে বাকি
সব বিভাগের ভাষা বাংলা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবশ্য ইংরেজিতে পড়াশোনা হয়, তবে
সেটাও নামকা ওয়াস্তে। আমি নিজে দেশের সেরা নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সুতরাং
ভেতরের খবর আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানবে না।
এবার
আসি প্রযুক্তিগত দক্ষতায়। সেটার এতোটাই অভাব যে গ্র্যাজুয়েটদের র্যান্ডমলি যদি জিজ্ঞেস
করেন যে কয়জনের কম্পিউটার আছে, বা কম্পিউটার চালাতে পারে কয়জন, তখন অবাক হবেন। যেখানে
বিশ্ব আর্টিফিসিয়াল ইন্ডিলিজেন্স এর যুগে প্রবেশ করছে। যেখানে আমাদের সামনে ধেয়ে আসছে
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সেখানে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের বড় একটা অংশ এখনো কম্পিউটার চালুই
করতে জানে না।
এবার
বুঝলেন তো বাংলাদেশে কেনো গ্র্যাজুয়েটদের বড় একটা অংশ বেকার? এর জন্য দায়ী গ্র্যাজুয়েটরা
না, এর জন্য দায়ী আমাদের বুড়ো ভাম নীতিনির্ধারকেরা। এরা এখনো সেই উপনিবেশিক আমলের শিক্ষা
আমাদের দিয়ে যাচ্ছে আর ভাবছে যে এটা দিয়েই আমরা বিশ্ব জয় করবো।
বাংলা
আমাদের মাতৃ ভাষা। আমরা বাংলায় কথা বলি। বাংলায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে যে তৃপ্তি
পাই, তা আর কোনো ভাষায় পাই না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না। বাস্তবতা
অনেক কঠিন। আমাদের অফিসিয়াল ও এডুকেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ যখন ইংরেজি ছিলো, তখনো আমরা নিজেদের
মাঝে বাংলায়ই কথা বলতাম। আমাদের কবি-সাহিত্যিকরা বাংলায়ই সাহিত্য চর্চা করতেন। খবরের
কাজগগুলো বাংলায়ই খবর প্রচার করতো, কোনো সমস্যা ছিলো না। এখনো যদি রাষ্ট্র ভাষা বাংলাই
রেখে অফিসিয়াল ও এডুকেশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইংরেজি করা হয়, তবে খুব একটা ফারাক হবে না।
মাঝখান দিয়ে তরুণ প্রজন্ম ইংরেজি শিখে গ্লোবাল মার্কেটে কম্পিট করার মতো স্কিলড হয়ে
উঠবে।
আর
প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছাড়া উপায় নেই। অদূর ভবিষ্যতে এই ভূখন্ডের মানুষের বড় একটা অংশ
হয়তো না খেয়ে মরবে এই প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তারাই
টিকে থাকবে যারা হাইলি টেকনলোজিক্যালি স্কিলড। তাই সরকারের উচিৎ প্রযুক্তিগত দক্ষতার
দিকে ভয়াবহ ভাবে জোর দেয়া।
শুধু ভাষা আর প্রযুক্তি এই দুটো যায়গায় পরিবর্তন এনে দেখুন, এখন যেমন ভারতীয়রা ইউরোপ-আমেরিকার
প্রযুক্তি বাজারে ডমিনেট করে, সামনে সেই যায়গাটায় বাংলাদেশিরা থাকবে, ইনশাল্লাহ।