কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রানীর দিঘির পাঁড় এর পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন


(ছবিঃ রানীর দিঘির পাঁড় বর্ষাকালে)

আমার জন্ম কুমিল্লায়। জন্মের পর থেকে এখানের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছি। এখানকার প্রতিটি মানুষ আমার আপনজন। আল্লাহর দেয়া এক প্রশান্তিময় শহর এটি যা ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। কুমিল্লা শহরের নিজস্ব হাজার বছরের সংস্কৃতি আছে। এই শহরের প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি গলিতে লেখা আছে হাজারো ইতিহাস। হাজারো মানুষের কতো গল্প। উচ্চশিক্ষার খাতিরে প্রায় ৫ বছর নিজ জন্মভূমি কুমিল্লা থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু আমার দেহ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও মনটা পরে থাকতো কুমিল্লায়। চিরচেনা প্রতিটা অলিতে গলিতে হেটে বেড়াতো আমার রুহ। আল্লাহর কসম, একটা দিনও কুমিল্লা আমার মন থেকে দূরে ছিলো না। অবশেষে পড়াশোনা শেষ করে একেবারে চলে এলাম নিজ জন্মভূমি কুমিল্লায়। একটা বছর বেশ ভালো ভাবেই কাটালাম।

কুমিল্লা শহরের প্রতিটা যায়গাই সুন্দর ও প্রশান্তিময়। রাতের বেলা আপনি যদি কুমিল্লার কান্দিরপাড় যান, আপনার মনে হবে যে আপনি আব্বাসী যুগের বাগদাদ নগরীতে হাটছেন। তবে শহরের মধ্যে অল্প কিছু যায়গা আছে, যেখানে মানুষ তার সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দু-দন্ড বসে প্রাশান্তির নিশ্বাস নিতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো কুমিল্লার ঐতিহাসিক রানীর দিঘির পাড়। আমার অত্যন্ত প্রিয়ো একটি যায়গা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমিডিয়েট সেকশনের সামনেই এই বিশাল দিঘি অবস্থিত। এর আশপাশেই অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকাতে যায়গাটি সব সময় তারুণ্যের উত্তাপের মধ্যে থাকে। চারদিকে তরুণদের আনাগোনা, আড্ডা, হই-হুল্লোর – এক অসাধারণ পরিবেশ। মাঝে মাঝে তারুণ্যের এই ওম গায়ে মাখতে আমিও যাই এখানে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি এই তরুণদের হাস্যোজল কলতান। কখনো কোনো ঘাটে নিজের মতো করে বসে থাকি। কখনো বা কারো জন্য অপেক্ষা করি। আবার কখনো বা এমনিই হেটে বেড়াই।

পুরো রানীর দিঘির চারপাশে অসংখ্য বড় বড় সবুজ গাছ ছিলো যা আমাদের ছায়া দিতো। তবে গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর দিঘিটিকে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। তা কেনো করা হয়েছে জানি না। হয়তো কোনো পাঁড়ের সংস্কার কাজ চলছে। তবে দেখলেই বুকটা হু হু করে উঠে। দিঘিটা যেনো একটা মাঠের মতো দেখা যায়।

তরুণরা দিঘির পাঁড়ের রেলিংগুলোতে বসে আড্ডা দিতো। সেই রেলিঙ্গগুলোতেও কে বা কারা আলকাতরা দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে জানি না। হয়তো এরা চায় না এই যায়গাটি তরুণদের আনন্দিত পদচারণায় মুখরিত থাকুক।

এখন আবার নতুন উৎপাত বেড়েছে কিশোর গ্যাং। এদের কারণে সব সময় এখানে দু-দন্ড শান্তির জন্য আসা মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। নারী হয়রানি, মারামারি, সশস্ত্র শোডাউন থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এরা করে না। এদের পেছনে আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাপোর্ট থাকাতে কেহই এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না।

অন্যদিকে নানা স্থান থেকে আগত মানুষেরা খাবারের প্যাকেট, পলিথিন থেকে শুরু করে এটা-সেটা ফেলে দিঘির পরিবেশটাকেই নোংরা করে ফেলছে। সিটি কর্পোরেশনের উচিৎ দিঘির চারপাশে বড় বড় কিছু ময়লা ফেলার যায়গা রাখা। যাতে করে মানুষ সেখানে তাদের ময়লা ফেলতে পারে।

এই বিষয়গুলোর আসলে সমাধান হওয়া দরকার। এমনিই দিন দিন এই প্রাণের শহরে মানুষ বাড়ছে, তার সাথে তাল দিয়ে বাড়ছে ঘন বসতি। শহরটা যে তার আগের রূপে নেই তা তো দেখেই বোঝা যায়। এই অল্প কয়টা যায়গাই আছে মানুষের নিশ্বাস নেয়ার মতো। এই যায়গাগুলোও যদি এভাবে শেষ হয়ে যায়, তবে সত্যিই আমরা নিশ্বাস ফেলার মতো কোনো যায়গা পাবো না। আমরা হয়ে যাবো ফ্ল্যাট নামক কারাগারে বন্দি। এই অবস্থার উন্নতি কল্পে তাই আপনার আমার সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের তো অবশ্যই আসতে হবে।

Popular posts from this blog

Water Terrorism of India: A New Weapon to Kill Bangladeshi People

কোনো মানুষের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা ইসলাম সমর্থিত কিনা?

বোধোদয়