নর্তকী থেকে নৃত্যশিল্পী: বাংলার সমাজে অশ্লীলতা নর্মালাইজেশনের গল্প


কিসের নৃত্যশিল্পী? নৃত্যশিল্পী বলতে কোনো শব্দ নেই। আসল শুদ্ধ শব্দ হলো নর্তকী। পরপুরুষকে গানের তালে তালে শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌনসুখ দেয় যে সেই নর্তকী।

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে নর্তকী ছিলো। তাদের কাজই ছিলো নাঁচ-গান করে শরীর প্রদর্শন করে রাজা-মহারাজা বা সাধারণ মানুষকে মনোরঞ্জন দেয়া। কাজটা নিতান্তই গর্হিত কাজ হিসেবে গণ্য হতো। কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়ে এই পেশায় আসতো না। একান্তই নিরুপায় না হলে অতীব নিম্ন পরিবারের মেয়েও কেউ এই পেশায় আসতো না। অর্থাৎ, সমাজে এই পেশাটা গর্হিত পেশা হিসেবে গণ্য হতো।

তবে এই অঞ্চলে ক্যাপিটালিজমের উদ্ভব হওয়ার পর নব্য-ক্যাপিটালিস্টদের নির্লজ্জ নারী দেহের প্রয়োজন হয়। কারণ ক্যাপিটালিজম এর মার্কেটিং স্ট্রাটেজির অন্যতম উপাদান হলো নারী ও নারী দেহ। ক্যাপিটালিজম নারীকে দেখে অবজেক্ট হিসেবে, মানুষ হিসেবে না। ক্যাপিটালিস্টদের কাছে নারী হলো একটা বস্তু, যাকে প্রদর্শন করে ক্রেতাদের পণ্যক্রয়ে আকর্ষণ করা যাবে।

এখন নারীকে বস্তু হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য ক্যাপিটালিস্টরা মিডিয়া ও শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ব্যাবহার করে ধীরে ধীরে নারীদের যেই সহজাত লজ্জাশীলতা সেটাকে কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে ক্যাপিটালিস্ট নিয়ন্ত্রিত গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড ও বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে সমাজে যেইসব টার্ম বা কনসেপ্ট খারাপ হিসেবে ছিলো, সেসবকে পরিবর্তনের মাধ্যমে নর্মালাইজ করা হয়।

যেমন 'নর্তকী'দের অশ্লীলতার কারণে সবাই তাদের ঘৃণা করতো। তাই ক্যাপিটালিস্টদের দোসর বাঙ্গু সেক্যুলাররা নর্তকীর স্থলে নতুন এক শব্দের উদ্ভাবন করে, তা হলো "নৃত্যশিল্পী"। যাতে শব্দের মধ্য দিয়ে একটা পজিটিভিটি তৈরি হয়। অন্যদিকে মিডিয়া ব্যাবহার করে এসব নাঁচ-গান ও অশ্লীলতাকে নর্মালাইজ ও গ্লোরিফাই করা হয়। যাতে করে নারীরা এসবে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজেদের কথিত ‘নৃত্যশিল্পীতে’ পরিণত করে, আর ক্যাপিটালিস্ট মিডিয়া তাদের প্রদর্শন করেই নিজেদের ব্যাবসা চালিয়ে যেতে পারে।

অথচ নর্তকী ও নৃত্যশিল্পীর মাঝে কোনোই পার্থক্য নেই। উভয়ের কাজই এক, মানুষের মনোরঞ্জন করা। কিন্তু শব্দের মার-প্যাঁচে একটা ন্যাগেটিভ পেশাকে নর্মালাইজ করা হলো আর সাধারণ মানুষদের বোকা বানানো হলো। এর মাধ্যমেই সমাজে ধীরে ধীরে অশ্লীলতার নর্মালাইজেশন হয়েছে। আগে যেই পেশার নাম শুনলে মানুষ ঘৃণা ভরে মুখ কুঁচকাতো, এখন সভ্য-ভদ্র ঘরের বাবা-মায়েরা চায় তাদের মেয়েরা নর্তকী হোক। সবাই তাকে নিয়ে চর্চা করুক।

তাই নৃত্যশিল্পী’র যায়গায় নর্তকী শব্দটা ব্যাবহার করুন। এভাবেই বাংলাদেশে সেক্যুলার কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখুন।

Popular posts from this blog

Water Terrorism of India: A New Weapon to Kill Bangladeshi People

কোনো মানুষের ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা ইসলাম সমর্থিত কিনা?

বোধোদয়